Blog
ওয়ার্ক স্ট্রেস: বিছানায় শরীর, অফিসে মন! ঘুমের অভাবে শারীরিক, মানসিক ও কর্মক্ষমতা কমে!

বর্তমান ব্যস্ত জীবনে অনেকেই কর্মস্থলের চাপ ও দায়িত্ব নিয়ে রাতে বিছানায় যান। শরীর বিশ্রামের জন্য প্রস্তুত হলেও, মনের মধ্যে চলতে থাকে অফিসের নানা চিন্তা—মিটিং, ডেডলাইন, ইমেইল, প্রজেক্ট ইত্যাদি। এই অবস্থা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং দীর্ঘমেয়াদে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ওয়ার্ক স্ট্রেস ও ঘুমের সম্পর্ক
কর্মস্থলের চাপ ও স্ট্রেস ঘুমের গুণগত মান হ্রাস করে। যুক্তরাষ্ট্রের Sleep Foundation-এর মতে, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা মস্তিষ্ককে “সতর্ক” অবস্থায় রাখে এবং ঘুমের প্রাকৃতিক চক্র ব্যাহত করে। ফলে বিছানায় গেলেও মস্তিষ্ক শান্ত হয় না, এবং আপনি নানা চিন্তায় ডুবে যান।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মস্থলের অতিরিক্ত চাপ ও স্ট্রেসের কারণে ঘুমের গুণগত মান হ্রাস পায়, যা কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ওয়ার্ক–লাইফ ব্যালেন্সের অভাব ও ঘুমের সমস্যা
যখন কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সুষমতা থাকে না, তখন ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ঘুমের গুণগত মান হ্রাস করে এবং অনিদ্রা সৃষ্টি করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স বজায় রাখা ঘুমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কর্মজীবনের চাপ ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলে, তবে তা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
ঘুমের অভাবের পরিণতি
মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতি গ্রস্থ হয়,
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। Columbia Psychiatry-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘুমের অভাব নেতিবাচক আবেগের প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে তোলে এবং ইতিবাচক আবেগ কমিয়ে দেয়, যা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বৃদ্ধি করে ।
CDC-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতি রাতে ৬ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমান, তাদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ২.৫ গুণ বেশি ।
Johns Hopkins Medicine-এর মতে, ঘুমের অভাব বিষণ্নতা, উদ্বেগ, ভুলে যাওয়া এবং চিন্তার অস্পষ্টতা সৃষ্টি করতে পারে ।
শারীরিক স্বাস্থ্য ক্ষতি গ্রস্থ হয়,
ঘুমের অভাব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে। Healthline-এর মতে, দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাব স্মৃতি ও শেখার ক্ষমতা কমায়, আবেগীয় অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং স্ট্রেস হরমোনের উৎপাদন বাড়ায় ।Healthline
Mayo Clinic-এর তথ্যমতে, দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাব স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় ।
Simba Sleep-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের অভাব ত্বকের সমস্যা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং ওজন বৃদ্ধি ঘটাতে পারে ।
কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়,
ঘুমের অভাব কর্মস্থলে মনোযোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রতিক্রিয়া সময় হ্রাস করে। Sleep Foundation-এর মতে, ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের নিউরন অতিরিক্ত কাজ করে, যা চিন্তা-ভাবনা, শারীরিক প্রতিক্রিয়া এবং আবেগীয় নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটায় ।
Sleep Doctor-এর তথ্যমতে, ঘুমের অভাবে কর্মীদের অনুপস্থিতি এবং আর্থিক ক্ষতি বৃদ্ধি পায়। যুক্তরাষ্ট্রে ঘুমের অভাবে কর্মক্ষমতা হ্রাসের কারণে বছরে প্রায় ১.২৩ মিলিয়ন কর্মদিবস হারানো হয় ।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের অভাবে কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক খারাপ হয়, কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং কর্মস্থলে অনৈতিক আচরণ বৃদ্ধি পায় ।
সুস্থ ঘুমের জন্য পরামর্শ
- প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন।
- নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী অনুসরণ করুন।
- ঘুমের আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার সীমিত করুন।
- ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল গ্রহণ এড়িয়ে চলুন।
- রিলাক্সেশন টেকনিক, যেমন মেডিটেশন বা ডিপ ব্রিদিং অনুশীলন করুন।
উপসংহার
কর্মস্থলের চাপ ও ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্সের অভাব ঘুমের গুণগত মান হ্রাস করে, যা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য ঘুমের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই, কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সুষমতা বজায় রাখা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা এবং ঘুমের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।