Blog
৫টি অভ্যাস আপনার ঘুমকে ধ্বংস করছে! আজই সতর্ক না হলে ভুগতে পারেন আজীবন!

আপনি কি রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না? ঘুম আসতে দেরি হয় বা বারবার ঘুম ভেঙে যায়? আশ্চর্যের বিষয় হলো, আপনার কিছু দৈনন্দিন অভ্যাসই এই সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে—যেগুলো সম্পর্কে আপনি সম্পূর্ণ অজ্ঞাত! বিছানায় ফোন দেখা, স্নুজ বাটন চাপা বা রাতের নোটিফিকেশন চেক করার মতো সাধারণ কাজগুলো আপনার ঘুমের চক্রকে ধ্বংস করছে। এই আর্টিকেলে আমরা এমনই কিছু নীরব ঘাতক অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনার অজান্তেই স্লিপ ডিসঅর্ডার বাড়িয়ে তুলছে।
১. বিছানায় ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করা (ব্লু লাইটের বিপদ)
স্মার্টফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপ থেকে নির্গত নীল আলো (Blue Light) সরাসরি মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করে। এই আলো মেলাটোনিন নামক ঘুমের হরমোনের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করে, ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।
ডা. ম্যাথিউ ওয়াকার (নিউরোসায়েন্টিস্ট ও Why We Sleep বইয়ের লেখক) বলেন, “রাত ১০টার পর ফোনের স্ক্রিন দেখলে মেলাটোনিন উৎপাদন ৫০% পর্যন্ত কমে যায়, যা ঘুমের গুণগত মান নষ্ট করে।”
সমাধান:
- শোবার আগে ১–২ ঘণ্টা স্ক্রিন ব্যবহার বন্ধ করুন।
- নাইট মোড বা ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন।
- ই-বুকের বদলে পেপারবুক পড়ুন।
২. স্নুজ বাটন চাপা: ভুলেও করবেন না!
অ্যালার্ম বাজলে স্নুজ বাটন চেপে আরও ১০ মিনিট ঘুমানো অনেকেরই অভ্যাস। কিন্তু গবেষণা বলছে, এটি স্লিপ ইনার্শিয়া (Sleep Inertia) বাড়ায়, যার ফলে সারাদিন ক্লান্তি ও মনোযোগের অভাব দেখা দেয়।
স্লিপ স্পেশালিস্ট ডা. মাইকেল ব্রেউস এর মতে, “স্নুজ বাটন চাপলে শরীর আবার গভীর ঘুমে চলে যায়, যা জেগে উঠাকে আরও কঠিন করে তোলে।”
সমাধান:
- একবার অ্যালার্ম বাজলে সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়ুন।
- প্রাকৃতিক আলোয় কিছুক্ষণ থাকুন (কর্টিসল হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে)।
৩. রাতে নোটিফিকেশন চেক করা (স্ট্রেস বাড়ায়)
রাতে ফোনের নোটিফিকেশন চেক করা বা সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে এবং অ্যাংজাইটি বাড়ায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৫% মানুষ যারা শোবার আগে স্ট্রেসফুল কন্টেন্ট দেখেন, তাদের ঘুমের মান খারাপ হয়।
সমাধান:
- ডোজ নোটিফিকেশন মোড চালু করুন।
- শোবার আগে মেডিটেশন বা হালকা মিউজিক শুনুন।
৪. অনিয়মিত ঘুমের সময় (সার্কাডিয়ান রিদম নষ্ট করে)
কখনো রাত জাগা, কখনো খুব তাড়াতাড়ি ঘুমানো—এই অনিয়ম সার্কাডিয়ান রিদম (শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়ি) নষ্ট করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি ডিপ্রেশন, ওবেসিটি ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষণা অনুযায়ী, “যারা প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমান, তাদের ঘুমের গুণগত মান অন্যদের চেয়ে ভালো।”
সমাধান:
- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান ও জেগে উঠুন (সপ্তাহান্তেও!)।
৫. ক্যাফেইন ও ভারি খাবার রাতে খাওয়া
রাতে কফি, চা বা চকলেট খাওয়া ক্যাফেইনের প্রভাবে ঘুম তাড়িত হয়। এছাড়া, ভারী বা মসলাদার খাবার হজমের সমস্যা তৈরি করে, যা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।
সমাধান:
- শোবার ৬ ঘণ্টা আগে ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন।
- রাতের খাবার হালকা ও সহজপাচ্য রাখুন।
উপসংহার: আজই বদলান এই অভ্যাসগুলো!
আপনার অজান্তেই এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো স্লিপ ডিসঅর্ডার তৈরি করছে। আজই সচেতন হয়ে এই নীরব ঘাতকগুলো থেকে দূরে থাকুন। নিয়মিত ঘুমের রুটিন, স্ক্রিন কম ব্যবহার এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে গভীর ও প্রশান্তিদায়ক ঘুম নিশ্চিত করুন!