Blog
সঠিক ঘুমের রুটিন নেই? অভ্যস্ত হোন, নয়তো অনিদ্রার শিকার হবেন!

অগোছালো ঘুমের সময়সূচী ও শরীরের সার্কেডিয়ান রিদম।
বর্তমান ব্যস্ত জীবনে ঘুমের সময়সূচী অগোছালো হয়ে পড়া একটি সাধারণ সমস্যা। অনেকেই রাতে দেরিতে ঘুমাতে যান, সকালে দেরিতে ওঠেন, আবার কেউ কেউ সপ্তাহান্তে ঘুম “পুষিয়ে” নেওয়ার চেষ্টা করেন। এই অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়ি, অর্থাৎ সার্কেডিয়ান রিদমকে ব্যাহত করে, যা দীর্ঘমেয়াদে অনিদ্রা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
সার্কেডিয়ান রিদম কী এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ?
সার্কেডিয়ান রিদম হলো শরীরের অভ্যন্তরীণ ২৪ ঘণ্টার ঘড়ি, যা ঘুম, জাগরণ, হরমোন নিঃসরণ, শরীরের তাপমাত্রা ও বিপাকীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এই রিদম সূর্যের আলো ও অন্ধকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কাজ করে, আমাদের শরীরকে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে ও জাগতে সহায়তা করে।
যখন আমরা নিয়মিত সময়মতো ঘুমাতে যাই ও জাগি, তখন এই রিদম সঠিকভাবে কাজ করে, ফলে ঘুমের গুণগত মান উন্নত হয় এবং সারাদিন আমরা সতেজ অনুভব করি।
অগোছালো ঘুমের সময়সূচীর প্রভাব
অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচী শরীরের সার্কেডিয়ান রিদমকে ব্যাহত করে, যার ফলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে:
- অনিদ্রা ও ঘুমের গুণগত মান হ্রাস: ঘুমের সময়সূচী অগোছালো হলে ঘুম আসতে দেরি হয় এবং ঘুমের গভীরতা কমে যায়।
- মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি: অনিয়মিত ঘুমের কারণে উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও মেজাজের পরিবর্তন হতে পারে।
- বিপাকীয় সমস্যা: একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সময়সূচীতে প্রতি ঘণ্টা পরিবর্তনে বিপাকীয় সমস্যার ঝুঁকি ২৭% পর্যন্ত বাড়তে পারে। National Institutes of Health (NIH)
- হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
সপ্তাহান্তে ঘুম “পুষিয়ে” নেওয়া কি কার্যকর?
অনেকেই ভাবেন, সপ্তাহের মধ্যে ঘুম কম হলেও সপ্তাহান্তে বেশি ঘুমিয়ে তা “পুষিয়ে” নেওয়া যায়। কিন্তু গবেষণা বলছে, এই অভ্যাস শরীরের সার্কেডিয়ান রিদমকে আরও বিঘ্নিত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। NIH MedlinePlus Magazine
সার্কেডিয়ান রিদম ঠিক রাখার উপায়
সার্কেডিয়ান রিদম সঠিক রাখতে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন:
- নিয়মিত ঘুম ও জাগরণের সময় নির্ধারণ করুন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও জাগা শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে সঠিক রাখে।
- সকালে প্রাকৃতিক আলোতে সময় কাটান: সকালের আলো সার্কেডিয়ান রিদমকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
- রাতের বেলা স্ক্রিন টাইম কমান: মোবাইল, ট্যাব বা কম্পিউটারের নীল আলো মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়, যা ঘুমে বাধা সৃষ্টি করে।
- ঘুমের আগে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন: ঘুমানোর আগে হালকা সঙ্গীত, ধ্যান বা বই পড়া মস্তিষ্ককে শান্ত করে।
- ক্যাফেইন ও ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন: ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন বা ভারী খাবার গ্রহণ ঘুমের গুণগত মান হ্রাস করতে পারে।
উপসংহার
সঠিক ঘুমের রুটিন শুধু ঘুমের মান উন্নত করে না, বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষা করে। অগোছালো ঘুমের সময়সূচী শরীরের সার্কেডিয়ান রিদমকে ব্যাহত করে, যা বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়িকে সঠিক রাখুন।