Blog
বিকেলের পর ক্যাফেইন গ্রহণ কীভাবে ঘুমের চক্র ব্যাহত করে ?

আজকের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় এক কাপ চা বা কফি যেন অনেকেরই প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্লান্তি দূর করতে, মনোযোগ বাড়াতে কিংবা কোনো সামাজিক মূহূর্তে এক কাপ চা বা কফি হয়ে ওঠে নিত্যসঙ্গী। কিন্তু আপনি জানেন কি, বিকেলের পর এক কাপ কফি বা চা আপনার রাতের ঘুম একেবারে উলট-পালট করে দিতে পারে?
ক্যাফেইন কী এবং এটি শরীরে কী করে?
ক্যাফেইন একটি প্রাকৃতিক উদ্দীপক (stimulant), যা প্রধানত কফি, চা, চকোলেট, এনার্জি ড্রিংক এবং কিছু ওষুধে পাওয়া যায়। এটি মূলত মস্তিষ্কে অ্যাডেনোসিন নামক ঘুম-উদ্দীপক নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যকারিতা রোধ করে। ফলে আপনি দীর্ঘ সময় জেগে থাকতে পারেন এবং নিজেকে “সজাগ” মনে হয়। তবে এর জন্যই রাতে ঘুম আসতে দেরি হয় কিংবা ঘুম ভেঙে যেতে পারে।
বিকেলের পর ক্যাফেইন গ্রহণের প্রভাব
১. ঘুমের দেরি:
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষ সন্ধ্যার পর বা রাতে ক্যাফেইন গ্রহণ করেন, তারা সাধারণত ঘুমাতে যেতে বিলম্ব করেন। ক্যাফেইন শরীরে গড়পড়তা ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। তাই সন্ধ্যা ৬টায় কফি পান করলে মধ্যরাত পর্যন্ত তার প্রভাব থাকতে পারে।
২. ঘুমের গুণগত মান কমে:
ক্যাফেইন গ্রহণ করলে “deep sleep” বা গভীর ঘুমের পরিমাণ হ্রাস পায়। গভীর ঘুম হলো আমাদের শরীর ও মস্তিষ্ক পুনরুজ্জীবিত হওয়ার প্রধান সময়। এটি কমে গেলে শরীর ক্লান্ত, মাথা ভারী, এবং মানসিক স্থিরতা কমে যায়।
৩. ঘন ঘন জেগে ওঠা:
রাতে যারা চা বা কফি পান করেন, তারা ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। ফলে পরদিন সকালে তারা সম্পূর্ণ বিশ্রামহীন মনে করেন এবং আবারো ক্লান্তি নিয়ে দিন শুরু হয়।
৪. হরমোনাল ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়:
ঘুমের সময় আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যেমন মেলাটোনিন নিঃসৃত হয়, যা ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। ক্যাফেইন এই হরমোনের নিঃসরণ ব্যাহত করে, ফলে সার্বিক ঘুমের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চা-কফি নির্ভরতা: এক প্রকার আসক্তি?
অনেকেই বলেন, “আমি দিনে ৪ কাপ কফি না খেলে মাথা কাজ করে না।” এটি এক ধরনের ক্যাফেইন নির্ভরতা, যা এক সময় এসে ঘুমের চক্রকেই বিপন্ন করে তোলে। দিনের বেলায় ক্লান্তি অনুভব হলে কফি পান করে মন চাঙা করার প্রবণতা জন্ম নেয়। কিন্তু রাতে ঘুম ঠিক না হওয়ায় আবার পরদিন ক্লান্তি—এভাবে শুরু হয় এক বিষাক্ত চক্র।
কোন সময় পর্যন্ত চা-কফি পান করা নিরাপদ?
সাধারণভাবে দুপুর ২টার পর ক্যাফেইন গ্রহণ এড়িয়ে চলা উচিত। যদি আপনার ঘুমের সমস্যা থাকে বা আপনি Insomnia-তে ভুগে থাকেন, তবে দুপুরের পর চা বা কফি পুরোপুরি বন্ধ রাখাই ভালো।
বিশেষভাবে এড়িয়ে চলুন:
সন্ধ্যার কফি
রাতের খাবারের পর গ্রিন টি
ডেজার্টের সাথে কফি বা চকোলেট
এনার্জি ড্রিংকস (যেগুলিতে উচ্চমাত্রায় ক্যাফেইন থাকে)
বিকল্প কী হতে পারে?
যেহেতু চা বা কফির বিকল্প খুঁজতে হবে, তাই কয়েকটি স্বাস্থ্যসম্মত ও ঘুম-বান্ধব বিকল্প হতে পারে:
ক্যাফেইন-মুক্ত হার্বাল টি (Sleep Tea)
হালকা গরম দুধ ও মধু
চ্যামোমাইল টি
ল্যাভেন্ডার ইনফিউশন ড্রিঙ্কস
ঘুম সহায়ক সাপ্লিমেন্ট বা অ্যারোমাথেরাপি
আপনার ঘুমের প্রতি সচেতনতা জরুরি
আপনার ঘুম মানে আপনার ভবিষ্যত স্বাস্থ্য। কেবল মাত্র বিকেলের এক কাপ কফি বা চা আপনাকে বহু রোগের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, মনোযোগের সমস্যা, এমনকি মানসিক অবসাদ। তাই আজ থেকেই আপনার দৈনন্দিন চা-কফি গ্রহণের সময়টা রিভিউ করুন।
শেষ কথা
Noble Immune-এর পক্ষ থেকে আমরা বিশ্বাস করি, সচেতনতার মাধ্যমেই ঘুমের গুণগত মান বৃদ্ধি করা যায়। আপনি যদি রাত জেগে কাজ করেন বা ঘুম নিয়ে যুদ্ধ করেন, তাহলে আজ থেকেই চা বা কফির সময় বদলান। প্রয়োজনে ঘুম সহায়ক প্রাকৃতিক পণ্য ব্যবহার করুন, জীবন বদলাতে সময় লাগবে না।
আপনার ভবিষ্যতের শক্তি লুকিয়ে আছে আজকের এক কাপ চায়ের সময় ঠিক করার মাঝেই।