Uncategorized

ঘুম কম হলে কর্মক্ষমতা কমে, স্বাস্থ্যও ক্ষতির মুখে — বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা!

sleep, insomnia, work tress,

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য। তবে নাইজেরিয়ার ওবাফেমি আওলোও বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক গ্রেগরি এরহাবর সতর্ক করেছেন, অপর্যাপ্ত ঘুম স্বল্প দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাঁর মতে, পুষ্টি ও ব্যায়ামের পাশাপাশি ঘুম সুস্থ জীবনের তৃতীয় স্তম্ভ।

ঘুমের ঘাটতি আপনার স্বাস্থ্যকে নীরবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে — এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছেন দেশের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি নাইজেরিয়ার ওবাফেমি আওলোও বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং হাসপাতাল কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত “Comprehensive Sleep Health: Exploring the Interplay between Sleep, Health and Economic Development in Emerging Economies” শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা জানান, পুষ্টি ও ব্যায়ামের পাশাপাশি সুনিয়ন্ত্রিত ঘুমও সুস্বাস্থ্যের অপরিহার্য স্তম্ভ।

বিশিষ্ট চিকিৎসা অধ্যাপক গ্রেগরি এরহাবর জানান, ঘুমের অভাব যেমন শরীর ও মন পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, তেমনি স্মৃতিশক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বিপাক কার্যক্রমসহ অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ঘুমের অভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

অধ্যাপক এরহাবরের মতে, দীর্ঘমেয়াদে কম ঘুম হলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, স্থূলতা এবং এমনকি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া নামক ঘুমের এক বিশেষ ব্যাধি এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।

তিনি বলেন, “সুস্থ ঘুম ছাড়া জীবনযাত্রার গুণগত মান ধরে রাখা সম্ভব নয়। আমরা দেখেছি কম ঘুম হৃদরোগ, মেজাজজনিত সমস্যা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দুর্বলতা এবং কর্মদক্ষতা হ্রাসের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।”

প্রযুক্তির প্রভাব ও ঘুমের ব্যাঘাত

আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে ঘুমের ব্যাঘাত ক্রমেই সাধারণ হয়ে উঠছে। গবেষণা বলছে, প্রতি রাতে সাত ঘণ্টার কম ঘুম হলে তা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, নয় ঘণ্টার বেশি ঘুমও শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের সমস্যাগুলোর সমাধানে শুধুমাত্র প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপ নয়, প্রয়োজন পরিকল্পিত ও সুসংগঠিত উদ্যোগ। ঘুমের স্বাস্থ্যকে টেকসই উন্নয়নের অংশ হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে।

ঘুমের স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই ঘুমের স্বাস্থ্যকে মানব উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। নাইজেরিয়ান স্লিপ সোসাইটির এই সম্মেলনে ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক অ্যালান ও’ব্রায়ান বলেন, “ঘুম, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।”

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শহরাঞ্চলে, বিশেষ করে কর্পোরেট পেশাজীবীদের মধ্যে ঘুমের অনিয়ম দিন দিন বাড়ছে। ঢাকা শহরের কর্মব্যস্ত পরিবেশ, প্রযুক্তিনির্ভরতা এবং অফিস ও ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্যহীনতা ঘুমের স্বাস্থ্যকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

কর্পোরেট নীতিতে ঘুমকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ

সম্মেলনের স্থানীয় আয়োজক এবং স্নায়ুবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোদুপে কোমোলাফে বলেন, “আধুনিক জীবনের চাপের কারণে ঘুমের গুরুত্ব আজ অবহেলিত। অথচ ঘুমের অভাব থেকে সৃষ্টি হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা, কর্মস্থলের অদক্ষতা এবং কিশোর-কিশোরীদের মানসিক ভারসাম্যহীনতা।”

তিনি আরও বলেন, “ঘুমের স্বাস্থ্যকে চিকিৎসা, নীতিনির্ধারণ ও কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এর জন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।”

উপসংহার

কর্পোরেট কর্মজীবনে ঘুমের গুরুত্ব আজ আর উপেক্ষার বিষয় নয়। এটি শুধু ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা, সমাজের মানসিক ভারসাম্য এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকেও প্রভাবিত করে। তাই স্বাস্থ্যসচেতনতা প্রচারে ঘুমের ভূমিকা এবং তা নিশ্চিত করার প্রয়াস নেওয়া জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *